অবতীর্ণঃ মদীনা
আয়াতঃ ০১⇒ স্বর্গেতে যে কিছু আছে ও পৃথিবীতে যে কিছু আছে তৎসমুদায় ঈশ্বরকে স্তব করিতেছে, এবং তিনি পরাক্রান্ত জ্ঞানময়।
আয়াতঃ ০২⇒ তিনিই যিনি গ্রন্থাধিকারীর মধ্যে যাহারা ধর্মদ্রোহী হইয়াছিল তাহাদিগকে প্রথম সৈন্য সংগ্রহে তাহাদের গৃহ হইতে বাহির করিয়াছিলেন, তোমরা (হে মোসলমান) মনে কর নাই যে, তাহারা বাহির হইবে, এবং তাহারা মনে করিয়াছিল যে, তাহাদের দুর্গ সকল ঈশ্বরের (শাস্তি) হইতে তাহাদিগের পক্ষে প্রতিরোধক হইবে। অনন্তর তাহারা যাহা মনে করে নাই সেই স্থান হইতে ঈশ্বরের (শাস্তি) তাহাদিগের প্রতি উপস্থিত হইল ও তাহাদের অন্তরে ভয় নিক্ষেপ করিল, এবং তাহারা আপনাদের গৃহপুঞ্জ স্বহস্তে ও বিশ্বাসীদিগের হস্তে নষ্ট করিতে লাগিল, অবশেষে হে চক্ষুষ্মান লোক সকল, তোমরা শিক্ষা লাভ কর।
আয়াতঃ ০৩⇒ এবং যদি পরমেশ্বর তাহাদের প্রতি দেশচ্যুতি লিপি না করিতেন, তবে অবশ্য পৃথিবীতে তাহাদিগকে শাস্তি দিতেন, এবং পরলোকে তাহাদের জন্য অগ্নিদন্ড রহিয়াছে।
আয়াতঃ ০৪⇒ ইহা এজন্য যে, তাহারা পরমেশ্বর ও তাঁহার প্রেরিতপুরুষের সঙ্গে বিরোধ করিয়াছে, এবং যে ব্যক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে শত্রুতা করে পরে নিশ্চয় পরমেশ্বর (তাহার সম্বন্ধে) কঠিন শাস্তিদাতা হন
আয়াতঃ ০৫⇒ তোমরা যে খোর্মাতরু ছেদন করিয়াছ, অথবা তাহা আপন মূলোপরি দন্ডায়মান থাকিতে রাখিয়াছ, তাহা ঈশ্বরের আজ্ঞাক্রমেই হইয়াছে, এবং তাহাতে দুরাচারগণ লাঞ্ছিত হইয়া থাকে।
আয়াতঃ ০৬⇒ পরমেশ্বর আপন প্রেরিতপুরুষের প্রতি তাহাদের যাহা কিছু প্রত্যর্পণ করিলেন তৎপ্রতি তোমরা (হে বিশ্বাসীগণ) অশ্ব ও উষ্ট্র চালনা কর নাই, কিন্তু পরমেশ্বর স্বীয় প্রেরিতপুরুষকে যাহার উপর ইচ্ছা করেন বিজয়ী করিয়া থাকেন, এবং ঈশ্বর সর্বোপরি ক্ষমতাশীল।
আয়াতঃ ০৭⇒ পরমেশ্বর গ্রামবাসীদিগের যে কিছু স্বীয় প্রেরিতপুরুষের প্রতি প্রত্যর্পণ করিয়াছেন তাহা ঈশ্বরের ও প্রেরিতপুরুষের ও (তাহার) স্বজনবর্গের এবং অনাথদিগের মধ্যে হস্তে হস্তে গৃহীত না হয়, এবং প্রেরিতপুরুষ তোমাদিগকে যাহা দান করে পরে তোমরা নিবৃত্ত থাকিও, এবং ঈশ্বরকে ভয় করিও, নিশ্চয় ঈশ্বর কঠিন শাস্তিদাতা।
আয়াতঃ ০৮⇒ যাহারা ঈশ্বরের প্রসন্নতা ও কৃপা অন্বেষণ এবং ঈশ্বর ও তাঁহার প্রেরিতপুরুষকে সাহায্য দান করিতে গিয়া স্বীয় গৃহ ও সম্পত্তি হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছে, সেই দেশত্যাগী নির্ধন পুরুষদিগের জন্য ধনের অংশ আছে, ইহারাই তাহারা যে সত্যবাদী।
আয়াতঃ ০৯⇒ এবং যাহারা ইহাদের (মোহাজ্বেদিগের) পূর্বে আলয়ে (মদীনাতে) ও বিশ্বাসে (এসলাম ধর্মে) স্থিতি করিয়াছিল, যে ব্যক্তি তাহাদের অভিমুখে দেশত্যাগ করিয়া চলিয়া আসিয়াছিল তাহাকে ভালোবাসে, এবং যাহা (দেশচ্যুত লোকদিগকে) প্রদত্ত হয় তাহাতে আপন অন্তরে কোন স্পৃহা উপলব্ধি করে না এবং যদিচ তাহাদের অভাব থাকে তথাপি (অন্যকে) আপন (বস্তুর) প্রতি অধিকার দান করে, এবং যাহারা আপন জীবনকে কৃপণতা হইতে রক্ষা করিয়াছে তাহাদের জন্য (ধনের অংশ আছে) অনন্তর তাহারাই ইহারা যে, মুক্ত হইবে।
আয়াতঃ ১০⇒ এবং যাহারা ইহাদের পরে উপস্থিত হইয়াছে, তাহারা বলিতেছে, “হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি আমাদের জন্য এবং যাহারা বিশ্বাসে আমাদিগের অগ্রে গমন করিয়াছে আমাদের সেই ভ্রাতাদের জন্য ক্ষমা কর, এবং যাহারা বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে তাহাদের সম্বন্ধে তুমি আমাদের অন্তরে ঈর্ষা প্রদান করিও না, হে আমাদের প্রতিপালক, নিশ্চয় তুমি অনুগ্রহকারক দয়াময়।
আয়াতঃ ১১⇒ কপট লোকদিগের দিকে (হে মোহমদ) তুমি কি দৃষ্টি কর নাই? তাহারা গ্রন্থাধিকারীদিগের মধ্যে যাহারা কাফের হইয়াছে সেই আপন ভ্রাতাদিগকে বলিয়া থাকে, “যদি তোমরা বহিষ্কৃত হও তবে অবশ্য আমরা তোমাদের সঙ্গে বহির্গত হইব, এবং আমরা কখনো তোমাদের বিষয়ে কাহারো অনুগত হইব না ও যদি তোমাদের সঙ্গে সংগ্রাম করা হয়, তবে অবশ্য আমরা তোমাদিগকে সাহায্য দান করিব,” এবং ঈশ্বর সাক্ষ্য দান রকিতেছেন যে, নিশ্চয় তাহারা মিথ্যাবাদী।
আয়াতঃ ১২⇒ যদি তাহারা বহিষ্কৃত হয় ইহারা তাহাদের সঙ্গে বহির্গত হইবে না, এবং যদি যুদ্ধ করা হয় তবে তোমাদিগকে সাহায্য দানও করিবে না, এবং যদি তাহাদিগকে সাহায্য দানও করে তবে অবশ্য (পরে) পৃষ্ঠভঙ্গ দিয়া ফিরিয়া যাইবে, তৎপর সাহায্য প্রদত্ত হইবে না।
আয়াতঃ ১৩⇒ অবশ্য (হে মোসলমান) তাহাদের অন্তরে ঈশ্বর অপেক্ষা তোমরা ভয় সম্বন্ধে প্রবল হও, ইহা এজন্য যে, তাহারা (এমন) একদল যে, জ্ঞান রাখে না।
আয়াতঃ ১৪⇒ দুর্গ সমন্বিত গ্রামেতে অথবা প্রাচীরের পশ্চাদ্দেশ হইতে ব্যতীত দলবদ্ধভাবে তাহারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করিবে না, তাহাদের সংগ্রাম তাহাদের মধ্যে সুকঠিন হয়, তুমি তাহাদিগকে দলবদ্ধ মনে করিতেছ, কিন্তু তাহাদের অন্তঃকরণ বিক্ষিপ্ত, ইহা এজন্য যে, তাহারা (এমন) একদল যে, জ্ঞান রাখে না।
আয়াতঃ ১৫⇒ তাহাদের অল্প পূর্বে যাহারা আপন কার্যের দুর্গতি ভোগ করিয়াছে তাহাদের অবস্থা সদৃশ (ইহাদের অবস্থা হইবে) এবং ইহাদের জন্য দুঃখজনক শাস্তি আছে।
আয়াতঃ ১৬⇒ শয়তানের অবস্থার তুল্য (তাহাদের অবস্থা) (স্মরণ কর) যখন সে মনুষ্যকে “ধর্মদ্রোহী হও” বলিল, পরে যখন ধর্মদ্রোহী হইল, তখন সে বলিল, “নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি বীতরাগ, নিশ্চয় আমি বিশ্বপালক পরমেশ্বরকে ভয় করি”।
আয়াতঃ ১৭⇒ অনন্তর উভয়ের (এই) পরিণাম হইল, নিশ্চয় উভয়ে (শয়তান ও সেই মনুষ্য) নরকাগ্নিতে থাকিবে, তথায় নিত্য নিবাসী হইবে, এবং অত্যাচারীদিগের জন্যএই বিনিময়।
আয়াতঃ ১৮⇒ হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা ঈশ্বরকে ভয় করিতে থাক, এবং উচিত যে প্রত্যেক ব্যক্তি যাহা কল্যাণকর (পরকালের) জন্য পাঠাইয়াছে তাহা চিন্তা করে, এবং তোমরা ঈশ্বরকে ভয় করিতে থাক, তোমরা যাহা করিয়া থাক নিশ্চয় পরমেশ্বর তাহার জ্ঞাতা।
আয়াতঃ ১৯⇒ এবং যাহারা ঈশ্বরকে ভুলিয়া গিয়াছে তোমরা তাহাদের সদৃশ হইও না, অনন্তর তিনি তাহাদিগকে তাহাদের জীবনের (কল্যাণ) বিস্মৃত করাইয়াছেন, ইহারাই সেই পাষণ্ড লোক।
আয়াতঃ ২০⇒ নরকানলনিবাসী ও স্বর্গলোকনিবাসী তুল্য নহে; স্বর্গনিবাসী, তাহারাই সিদ্ধকাম।
আয়াতঃ ২১⇒ যদি আমি এই কোরআন পর্বতোপরি অবতারণ করিতাম তবে তুমি (হে মোহম্মদ) অবশ্য ঈশ্বরের ভয়ে তাহাকে বিদীর্ণ ও অবনত দেখিতে, এবং এই সকল দৃষ্টান্ত আমি মানবমণ্ডলীর জন্য বর্ণন করিতেছি, ভরসা যে, তাহারা চিন্তা করিবে।
আয়াতঃ ২২⇒ তিনিই ঈশ্বর যিনি তিনি ব্যতীত উপাস্য নাই, তিনি অন্তর্বাহ্যবিৎ, তিনি দাতা দয়ালু।
আয়াতঃ ২৩⇒ তিনিই ঈশ্বর যিনি তিনি ব্যতীত উপাস্য নাই, রাজা অতি পবিত্র নির্বিকার অভয়দাতা রক্ষক বিজেতা পরাক্রান্ত গৌরবান্বিত, যাহা অংশী নিরুপিত হয় তাহা অপেক্ষা ঈশ্বরের পবিত্রতা (অধিক)।
আয়াতঃ ২৪⇒ সেই ঈশ্বরই স্রষ্টা আবিষ্কর্তা আকৃতির বিধাতা, উত্তম নাম সকল তাঁহারই, স্বর্গে ও পৃথিবীতে যে কিছু আছে তাঁহাকে স্তব করিয়া থাকে, এবং তিনিই বিজয়ী কৌশলময়।